ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটে জিতে কে কত টাকা পাবেন? প্রধান, সদস্য, সভাধিপতি, সভাপতিদের ভাতা কত, জেনে নিন।

সবে পঞ্চায়েত ভোট শেষ হয়েছে। গ্রামবাংলায় ফলাফল প্রকাশ হতেই দেখা গিয়েছে, বাংলা জুড়ে তৃণমূলের জয়জয়কার। রাজ্যের প্রতিটি জেলা পরিষদ দখল করেছে তৃণমূল। একটিও জেলা পরিষদ বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস সহ বিরোধীরা দখল করতে পারেনি। রাজ্যের অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ঘাসফুলের দখলেই গিয়েছে। এবার গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের বোর্ড গঠনের পালা।

পঞ্চায়েত ভোট ২০২৩

যদিও পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের তরফে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে যেহেতু বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে আদালতের তরফে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, ফলে স্বাভাবিক নিয়মেই তিনটি স্তরেই বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। আর পঞ্চায়েত নির্বাচনের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া নিয়ে আদালতের ভূমিকা কতখানি হওয়া উচিত বা সেখানে আদৌ কোনো জটিলতা সৃষ্টিকারী নির্দেশিকা দেওয়া যায় কিনা, সেই বিষয়েও আইন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বহু মতবিরোধ রয়েছে।

ফলে পঞ্চায়েত ভোট প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে গ্রাম বাংলার রাশ তৃণমূল কংগ্রেসের হাতেই গিয়েছে। সম্প্রতি জানা যাচ্ছে, ২-১ সপ্তাহের মধ্যে বোর্ড গঠন নিয়ে নির্দেশিকা জারি করা হতে পারে। আর পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরের বোর্ড গঠনের নির্দেশিকা জারি হলেই যত শীঘ্র সম্ভব বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফেলা হবে। তার কারণ, গ্রামবাংলায় সার্বিক উন্নয়নের কাজ ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের এর মাধ্যমেই করতে হয়।

তাই যাতে কোনোভাবেই রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়ন থেকে শুরু করে সরকারি পরিষেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা সৃষ্টি না হয়, তাই নিয়মানুযায়ী সঠিক সময়ে পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরের বোর্ড গঠন করে ফেলা হবে। কিন্তু নির্বাচনে পঞ্চায়েত ভোট এর তিনটি স্তরেই যারা জয়ী হলেন, তারা পদাধিকার অনুযায়ী কত সাম্মানিক পাবেন? পঞ্চায়েত প্রধান, উপপ্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ-সভাপতি, কর্মাধ্যক্ষ এবং জেলা পরিষদের সভাধিপতি এবং সহ-সভাপতি ও কর্মাধ্যক্ষরা কত সাম্মানিক পাবেন?

আরও পড়ুন, বাংলা আবাস যোজনা ও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা দেওয়া শুরু, তালিকা দেখেছেন?

পাশাপাশি, এই তিনটি স্তরেই যারা সাধারণ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন, তারাই বা কত টাকা ভাতা পাবেন, এই বিষয়টি একবার জেনে নেওয়া যাক।
রাজ্যে ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় আসার আগে বামফ্রন্টের জমানায় পঞ্চায়েতের তিন স্তরের পদাধিকারীদের জন্য সাম্মানিক ছিল খুবই কম। গ্রাম পঞ্চায়েত ভোট, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের সাধারণ সদস্যরা কোনো সাম্মানিক পেতেন না। তারা যদি কোনো মিটিংয়ে যোগ দিতেন তাহলে আসা-যাওয়ার খরচ বাবদ সরকারের তরফে ১৫০ টাকা করে দেওয়া হতো।

মুখুমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 2017 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম পঞ্চায়েত সম্মেলন (Panchayat Sammelan) করেন। আর সেই সম্মেলন থেকেই পঞ্চায়েতের তিন স্তরের জনপ্রতিনিধিদের (Elected Members of Panchayat) জন্য সাম্মানিক বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেন। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সেই সময়ে কত সম্মানিক দেওয়া হতো, একবার দেখা যাক।

আরও পড়ুন,  চিট ফান্ড এর টাকা ফেরত দিচ্ছে কেন্দ্র সরকার, পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকেরা পাবেন।

জেলা পরিষদের সভাধিপতি ৩৫০০ টাকার পরিবর্তে নতুন হারে ৫ হাজার টাকা পেতেন।
জেলা পরিষদের সহ-সভাপতি সভাধিপতি ৩ হাজার টাকার পরিবর্তে ৪ হাজার টাকা পেতেন।
কর্মাধ্যক্ষরা ৩ হাজার টাকার পরিবর্তে ৪ হাজার টাকা পেতেন।
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ২৮০০ টাকার বদলে ৩৫০০ টাকা পেতেন।

পঞ্চায়েত প্রধানদের ২০০০ টাকা বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা করা হলো।
সকল সাধারণ সদস্যরা ১৫০০ টাকা করে ভাতা পেতেন।
এরপরে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট এ তৃণমূল ব্যাপকভাবে জয় লাভ করে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরে ফের গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের সাম্মানিকের হার বাড়ানো হয়। পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরের পদাধিকারীদের সাম্মানিক বৃদ্ধি করা হলো।

Debit Card, ATM Card, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, এটিএম কার্ড বা ATM Withdrawal

সেই বৃদ্ধির পর বর্তমানে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের পদাধিকারীরা কত টাকা ভাতা পান, দেখে নেওয়া যাক।

পঞ্চায়েত ভোট ২০২৩
১. জেলা পরিষদ (Zilla Parishad):
সভাধিপতি– 9000 টাকা
কর্মাধ্যক্ষ– ৭০০০ টাকা
সাধারণ সদস্য– ৫ হাজার টাকা

২. পঞ্চায়েত সমিতি (Panchayat Samity):
সভাপতি ৬০০০ টাকা
কর্মাধ্যক্ষ 5000 টাকা
সাধারণ সদস্য ৩৫০০ টাকা
৩. গ্রাম পঞ্চায়েত (Gram Panchayat):
প্রধান ৫০০০ টাকা
সাধারণ সদস্য ৩০০০ টাকা

তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই রাজ্যজুড়ে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিদের সাম্মানিক বৃদ্ধি করা হয়। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা প্রায় ২৪ ঘন্টাই রাজনীতির কাজে নিয়োজিত থাকেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে স্থানীয় প্রশাসনে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন, তাদের ক্ষেত্রে সম্মানিকের হার অবশ্যই বাড়ানো উচিত। তা না হলে বর্তমান আর্থিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে একজন মানুষের ন্যূনতম দিন যাপন করার ক্ষেত্রে যা সমস্যাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। বাম জমানায় যেখানে একেবারে সামান্য কটা টাকা ত্রিস্তর গ্রাম পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া হতো, সেখানে কিছুটা হলেও তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাম্মানিকের হার বৃদ্ধি করা হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button