Dearness Allowance – পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মীদের DA নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা।
বকেয়া Dearness Allowance প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য
বকেয়া ডিএ তথা Dearness Allowance এর দাবীতে উত্তাল বাংলা। দিনের পর দিন অনশন করেছে, সরকারি কর্মী ও শিক্ষকেরা। ২০১৬ সাল থেকে মামলা চলছে। তিন বার জয় লাভের পর ও তাদের দাবী মতো Dearness Allowance বা মহার্ঘভাতা পাচ্ছেন না। সরকারের কাছে দাবী করলে পুরোটা না পাওয়া গেলেও, কিছুটা পেলে আন্দোলন প্রশমিত করা যায়। কিন্তু ৩৭% এর যায়গায় ৩% মহার্ঘভাতা মেলেয় কার্যত বেজায় চটেছেন সরকারি কর্মীরা। অন্যদিকে মামলা ও কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এই পরিস্থিতি সামাল দিতে কার্যত ড্যামেজ কন্ট্রোলে ক্ষোদ মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্য সরকার কর্মীদের দাবী মতো কেন ডিএ দিচ্ছে না। AICPI কারে কেন্দ্র কেন ডিএ দিচ্ছে, তার গোপন রহস্য কি? রাজ্য আর কেন্দ্রের Dearness Allowance এর ফারাক এতো কেন, কার্যত সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর এদিনের বক্তব্যে কার্যত কেন্দ্রের বঞ্চনার কথা আরেকবার ফুটে উঠলো তার মুখ থেকে।
রাজ্য কেন Dearness Allowance দিচ্ছেনা?
রাজ্যের বহু প্রকল্পের টাকা কেন্দ্রীয় সরকার আটকে রেখে দিয়েছে। রাজ্যকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আবাস যোজনার টাকা, ১০০ দিনের টাকা, রাস্তার টাকা, সমস্ত প্রকল্পের কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের মোদি সরকারের বঞ্চনার বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন ঝাড়গ্রামের সভা থেকে কেন্দ্রের মোদি সরকারের বঞ্চনার কথা তুলে ধরেন মমতা।
সম্প্রতি জেলা সফরে ঝাড়গ্রাম গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঝাড়গ্রামেই এক সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার বিরুদ্ধে সরব হন। সেখানেই তিনি মন্তব্য করেন, ভোটের আগে কেন্দ্রীয় সরকার মুষ্টিমেয় কিছু উপরতলার লোককে Dearness Allowance দিচ্ছে। লোকসভা ভোটের আগে তাদের মন জোগাতে এই DA দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরির ক্ষেত্রে পলিসি একরকম, আর রাজ্য সরকারের চাকরির ক্ষেত্রে পলিসি আলাদা (Central Government Employees Rules are Not Same For State Government Employees) কেন্দ্র রাজ্যের বরাদ্দ এর টাকা দিচ্ছে না।
বঞ্চিত করছে বাংলাকে। আর ভোটের আগে কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারীদের Dearness Allowance দিচ্ছে। জনগন কে বঞ্চিত করে মুষ্টিমেয় কিছু লোককে এই টাকা দেওয়া হচ্ছে। ঝাড়গ্রামের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সরব হওয়াকে কেন্দ্র করে Dearness Allowance আন্দোলনকারী রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের একাংশের কিছু সংগঠনের তরফে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য পেশ করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় হারে বকেয়া Dearness Allowance এর দাবিতে কলকাতার রাজপথে বসে ধরনা বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশের সংগঠন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। কখনো তারা ধর্মঘট, Strike, কর্মবিরতি, পেন ডাউন এর মত কর্মসূচি করেছেন। এমনকি দিল্লির রাজপথে গিয়েও Dearness Allowance এর দাবি জানিয়ে এসেছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো লাভ হয়নি।
বর্তমানে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন রয়েছে। এখনো পর্যন্ত শুনানি শুরু হয়নি শীর্ষ আদালতে। সম্প্রতি শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি উঠলে আরো ৩ থেকে ৪ মাস পিছিয়ে যায় শুনানির দিন। ফলে এর পর থেকেই রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ যারা DAর দাবিতে আন্দোলন করছেন, তারা কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন।
তাদের সেই হতাশা কাটানোর জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তরফে মাঝেমধ্যে ইন্ধন যোগানো হচ্ছে। আর এরকম একটা আবহের মধ্যেই ঝাড়গ্রামে জেলা সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের DAর প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন। সরকারি কর্মচারীদের ডিএর প্রসঙ্গ তুলতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার বিরুদ্ধে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিনের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের একাংশের সংগঠন কনফেডারেশন অফ স্টেট গভমেন্ট এমপ্লয়ীজের তরফে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী যে পলিসির কথা বলেছেন, সেটা ঠিক নয়। কেন্দ্রীয় সরকার বছরে দুইবার DA দিয়ে থাকে। সেই নিয়ম অনুযায়ী ফের ডিএ দিচ্ছে কেন্দ্র। এর সাথে ভোটেত কোনও সম্পর্ক নেই। আর রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের ক্ষেত্রে সামাজিক প্রকল্প ও কর্মীদের বেতন দুটি আলাদা হিসাবের টাকা, তাই প্রকল্পের টাকা দিয়ে Dearness Allowance দেওয়া হচ্ছে, এই যুক্তি অমূলক।
যখন রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের বছরে দুইবার এইভাবে DA দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। মোদি সরকারের আমলেও সেটা একইভাবে চলছে। আর রাজ্যের পলিসি সম্বন্ধে মুখ্যমন্ত্রী SAT এ যখন মামলা হয়েছিল তখন জানাতে পারতেন। AICPI সূচকের উপর নির্ভর করে Dearness Allowance দেওয়া হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন, পশ্চিমবঙ্গের পার্শ্ব শিক্ষকদের সুখবর, বেতনবৃদ্ধি স্থায়ীকরণ ও পদোন্নতি নিয়ে নবান্নের ঘোষণা।
বকেয়া ডিএ নিয়ে আন্দোলনকারী আরেক সরকারি কর্মচারী সংগঠন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফে বলা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কেন্দ্রের হাতে রিজার্ভ ব্যাংক রয়েছে। তাহলে অন্যান্য রাজ্যগুলির সরকারি কর্মচারীদের DA দেওয়া হচ্ছে কিভাবে? তাদের হাতে তো আর রিজার্ভ ব্যাংক নেই। প্রসঙ্গত, ঝাড়্গ্রামের সভাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের চাকরির সঙ্গে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের চাকরির পার্থক্যের বিষয়টিও তুলে ধরেন।
এর আগেও কেন্দ্রীয় হারে বকেয়া Dearness Allowance এর প্রসঙ্গে এই একই কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এটা ঠিক, কেন্দ্রীয় সরকারের হারে ডিএ বা বেতন কখনোই রাজ্য সরকারের চাকরি করে দাবি করা যায় না। আর আগেও একাধিক বার জানানো হয়েছে, রাজ্যজুড়ে বহু সামাজিক প্রকল্প চলছে। সেখানে রাজ্যের কোষাগার থেকে নিয়মিত খরচ হচ্ছে। আর সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের পকেটে মোটা অংকের টাকা ঢোকানোর জন্য বিরাট পরিমান DA দিতে গেলে সাধারণ মানুষের এই সমস্ত প্রকল্প বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যেটা কখনোই রাজ্যবাসী সহজে মেনে নেবে না।