Bidi – ধূমপায়ী ও বিড়ি শ্রমিকদের মাথায় হাত! বন্ধ হচ্ছে বিড়ি বিক্রয়। আর খুঁজলেও আর মিলবে না
ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর (Bidi) এটা আমরা সবাই জানি তবুও অনেক ব্যক্তিকে দেখা যায় কোন না কোন নেশার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। যদিও ধূমপানের মতো ক্ষতিকারক নেশাজাতীয় উপাদানকে স্বাস্থ্য হানিকর হিসেবে গণ্য করা হয় তবুও অনেক ব্যক্তি চেষ্টা করেও এই নেশা থেকে মুক্তি পাননি। আর আর তাই গ্রাম্য অঞ্চলে এখনো বিড়ি ব্যবসা অনেকটাই প্রসারিত রয়েছে অনেক ব্যক্তি এই ব্যবসা করেই উপার্জন করে থাকেন।
Bidi Manufacturing Industry will be Stopped in West Bengal
এ ছাড়া গ্রামের অনেক মেয়ে বা মহিলারা Bidi বা বিড়ি প্যাকেটজাত করে অর্থ ইনকাম করে সংসার চালায়। কিন্তু শোনা যাচ্ছে বিড়ি বিক্রি হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু এর কারণ কি সেটা জানতেই সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি পড়ুন।
এই খবরে সবচেয়ে বেশি চিন্তায় পড়েছেন Bidi বা বিড়ি জাতীয় জিনিস নেশাগ্রস্থ মানুষরা। কারণ নেশা এমন একটি জিনিস যেটা একদিন বন্ধ করলে শারীরিক অসুস্থ থেকে মানসিক অসুস্থতা শুরু হয় একজন ব্যক্তির। শুধু তাই নয় বাজারে হঠাৎ বিড়ি বিক্রি বন্ধ হয়ে গেলে তাহলে বিড়ি ব্যবসায়ীদেরও অর্থনৈতিক উপার্জন থমকে দাঁড়াবে।
সাধারণত জঙ্গলমহল এলাকার আদিবাসী ও তফসিল জাতির লোকেরা Bidi বা বিড়ি বাঁধাই কর্মের সাথে যুক্ত রয়েছেন এছাড়া বাঁকুড়া জেলা এর জন্য অন্যতম শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। যদিও আগেকার যুগে বিড়ি বাধাই একটি কুটির শিল্প হিসেবে ধরা হলেও বর্তমানে বৃহৎ কুটির শিল্পের মধ্যেই এই শিল্প পরে আর এই বিড়ি শিল্পীর সাথে হাজার হাজার মানুষ যুক্ত রয়েছেন।
কিভাবে বিড়ি ব্যবসায়ীরা এই বিড়ি তৈরি করতেন
বিড়ি ব্যবসার সাথে যুক্ত শ্রমিকরা বিস্তীর্ণ জঙ্গল গুলিতে কেন্দু গাছ থেকে পাতা তুলে বিভিন্ন সমবায় সংস্থা গুলিতে জোগান দিতেন। সেখান থেকে কাঁচামাল যেত নিকটবর্তী কারখানা গুলোতে। সেখানেই হতো Bidi বা বিড়ি বাঁধাই এর কাজ। আবার অনেকেই চুক্তিভিত্তিকভাবে কারখানা গুলোর সঙ্গে কাজ করে বাড়িতেও বিড়ি নিয়ে গিয়ে বাঁধাই করতেন।
যদি সিগারেট এর চাহিদা অনেক রয়েছে তবুও গ্রাম্য অঞ্চলগুলোতে এখনো পর্যন্ত Bidi বা বিড়ির যথেষ্ট চাহিদা থাকায় সরকারও এই ব্যবসায় ভালো আর্থিক সাহায্য করতেন। ফলে প্রচুর মানুষ এর মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে সংসার চালাত। কিন্তু সম্প্রতি এই শিল্পে দেখা দিয়েছে ভরাডুবি।
বিগত কয়েক বছর ধরে Bidi বা বিড়ি তৈরির জন্য মিনিমাম অর্থনৈতিক সাপোর্ট প্রাইস দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। ফলে বিড়ি ব্যবসার যে মূলধন বা অর্থনৈতিক পরিকাঠামো সেটা একদমই ভেঙে পড়েছে। যেহেতু সরকারি সাহায্য পাচ্ছে না বিড়ি উত্তোলন সংস্থাগুলো তাই শ্রমিকদেরও বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সরকারি সাহায্যের অভাবে কম বেতনের জন্য শিল্পের সঙ্গে যুক্ত অনেক শ্রমিক আর কাজ করতে চাইছে না। জঙ্গল থেকে কেন্দু পাতা তোলা কমিয়ে দিয়েছেন আদিবাসী লোকেরা। কাঁচামালের অভাব ঘটছে কারখানা গুলিতে। তার ভিডিও আগের মতন উৎপাদন হচ্ছে না। ফলের দোকান গুলোতেও Bidi বা বিড়ির জোগানের ঘাটতি হচ্ছে।
যদিও বাইরে থেকে কাঁচামাল আমদানি করে ব্যবসা চালানো হচ্ছে কিন্তু সেটা অনেক ব্যয় সাপেক্ষ। এই দিকে আবার তার ওপর রয়েছে জিএসটি (GST). ফলে লাভের তুলনায় উৎপাদন ব্যয় বহুল হওয়ায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কারখানা গুলিও। কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য এই কাজের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরাও এর পরিবর্তে অন্য কাজ খুঁজে নিচ্ছে কারণ রুজি রুটি না থাকলে তাদের না খেয়ে মরতে হবে।
আবারও প্রায় 100 টাকা কমলো রান্নার গ্যাসের দাম! এইভাবে বুকিং করলে আপনিও পাবেন এই বিশেষ ছাড়
অন্যদিকে সমবায় সমিতি গুলোরও নির্বাচন না হওয়ায় পরিচালন কমিটি তৈরি হচ্ছে না। ফলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সেই সংস্থা গুলিও যার ফলে বিড়ি বাঁধাই বর্তমানে সংকটের মুখে। তাই বিড়ি নেশাগ্রস্থ মানুষদের কাছে এটাই মনে হচ্ছে ভবিষ্যতে Bidi বা বিড়ি জাতীয় নেশা দ্রব্য একবারে উঠে যেতে চলেছে।
এটা হলে তাদের অনেকটাই সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে সেটা এখন থেকেই বুঝতে পারছে তারা। এদিকে বাঁকুড়ার বিজেপি নেতা সুভাষ সরকার জানিয়েছেন তারা অনেক দিন ধরেই সরকারকে এর জন্য ব্যবস্থা নিতে বলেছেন কিন্তু সরকার কোনরকম ইতিবাচক উত্তর দেননি।
তিনি আরো জানান যেহেতু তৃণমূল সরকার আদিবাসী বিরোধী তাই Bidi বা বিড়ি জাতীয় শিল্পের এই করুন অবস্থায় রাজ্য সরকার কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। স্থানীয় এক বিড়ি কারখানার ম্যানেজার অশোক গড়াই জানান, “বিড়ি শিল্প খুবই সঙ্কটে রয়েছে। এর অদূর ভবিষ্যত নেই। পাঁচ সাত হাজার মানুষ যুক্ত হবে।
খুবই শোচনীয় অবস্থা। কারণ Bidi বা বিড়ি ব্যবসা করে আমাদের সংসার চলছে না। কাঁচামালের সংঙ্কট নেই। দাম বেড়ে গিয়েছে। অথচ বিড়ির দাম বাড়েনি। এদিকে ২০২৪ এর এই লোকসভা নির্বাচনে বিড়ির ব্যবসার সংকট দূর করার জন্য স্থানীয় এলাকার আদিবাসী মানুষদের আশ্বস্ত করে ভোটে দাঁড়িয়েছেন বিজেপি নেতা।
পশ্চিমবঙ্গে বন্ধ হওয়ার মুখে বিড়ি বিক্রয়। বিড়ি শ্রমিক ও ধূমপায়ীদের দুঃসংবাদ!
তার কথা অনুযায়ী এবার যদি তারা ভোটে যেতে তাহলে এই Bidi বা বিড়ির সংকট সমাধান করবেন বলে জানিয়েছেন। আবার রাজ্যে আগের মতই বিড়ি শিল্পকে ফিরিয়ে আনার এবং বিড়ি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখবে বলে আশ্বস্ত করেছেন।
যদিও আদিবাসী ভাইরা এবং এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা কোনভাবেই মন থেকে মেনে নিতে পারছে না আবার আগের জায়গায় ফিরে পাবে তাদের এই বিড়ি শিল্পকে। অর্থাৎ এক প্রকার অনিশ্চয়তার ভবিষ্যৎ নিয়ে অপেক্ষা করছেন বিড়ি ব্যবসার সাথে যুক্ত এলাকার বাসিন্দারা এবং আদিবাসী ভাইরা।