পশ্চিমবঙ্গে বকেয়া ডিএ কবে, আদালতে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলো রাজ্য সরকার।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ (Dearness Allowances) মামলা চলছে গত চার বছর ধরে। এদিন সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলার শুনানি হয়। যদিও মামলার নিস্পত্তি এখনই নয়, সেই বিষয়ে নিশ্চিন্ত হলেও এদিন কয়েকটি বিষয় উঠে এসেছে, যেটি রাজ্য সরকারি কর্মীদের জেনে রাখা প্রয়োজন।
বকেয়া ডিএ নিয়ে রাজ্যের প্রতিক্রিয়া
এদিন শুনানিতে সরকারি পক্ষের উকিল বলেছেন যে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের মত রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ দিতে বাধ্য নয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। প্রসঙ্গত কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্য সরকার সর্বভারতীয় মূল্যবৃদ্ধি সূচক বা AICPI হারে ডিএ দিয়ে থাকে। প্রথমে কেন্দ্র সরকার ঘোষণা করে। তারপর একাধিক রাজ্য সেই হারে বকেয়া ডিএ ঘোষণা করে। তবে কয়েকটি রাজ্য কেন্দ্রের সমান না দিতে পারলেও পার্থক্য বেশি নয়।
এদিকে বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা অনেক কম হারে ডিএ পান। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা বা DA এর পরিমান বেসিক পে এর ৬ শতাংশ এবং কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতার (DA)পরিমান হল ৪২ শতাংশ, অর্থাৎ রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের তুলনায় ৩৬ শতাংশ ডিএ কম পাচ্ছে। অন্যদিকে কেন্দ্রে ৭ম বেতন কমিশন (7th Pay Commission) চালু হলেও রাজ্যে ৬ষ্ঠ বেতন কমিশন বা 6th Pay Commission চালু আছে। আর সেই জন্যই মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন কেন্দ্রে থেকে রাজ্যের বেতন কাঠামো সম্পূর্ণ আলাদা।
এই বকেয়া ডিএ এর জন্যই রাজ্য সরকারি কর্মীরা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছে। শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে তারা আন্দোলন করে। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের পয়লা বৈশাখের দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে একটি খোলা চিঠি দেয় আন্দোলনকারীরা। পয়লা বৈশাখের দিন এই খোলা চিঠিকে হালখাতা বলে উল্লেখ করা হয়। সেই চিঠিতে ১২ বছর ধরে সরকারি কর্মচারীদের বাকি থাকা ডিএ, ডিএ বৃদ্ধি এবং বাকি থাকা শূন্যপদের নিয়োগগুলি সম্পূর্ণ করার অনুরোধ জানানো হয়।
আরও পড়ুন, 32000 বাতিল শিক্ষক চরম সংকটে, পর্ষদ সভাপতির জরুরী তলব, ফের ইন্টারভিউ হবে?
গত ১৪ই জুলাই এর শুনানিতে সরকার পক্ষের আইনজীবী বলেছেন যে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে কেন্দ্রের নীতি হুবহু অনুসরণ করা হবে। তবে কেন্দ্রের নীতি হুবাহু অনুসরণ করা হলেও কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের মতো মহার্ঘ ভাতা দিতে বাধ্য করা যায় না পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। এর আগে ডিএ সংক্রান্ত মামলার শুনানি একাধিকবার স্থগিত করা হয়েছে।
গত শুক্রবারও এই মামলার নিষ্পত্তি ঘটেনি। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে সওয়াল করা হয় যে ডিএ সংক্রান্ত মামলার শুনানির জন্য বেশ কিছুদিন সময় লাগতে পারে কারণ এক্ষেত্রে ৪১,০০০ কোটি টাকা জড়িয়ে রয়েছে।
বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে যে ডিএ মামলা চলছে, তা আদতে পঞ্চম বেতন কমিশনের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা সংক্রান্ত মামলা। গত নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলা দায়ের করেছে রাজ্য সরকার।
আদালতে রাজ্যের পক্ষে যুক্তি
- কেন্দ্রীয় হারেই যে ডিএ দিতে হবে, তেমন বাধ্যবাধকতা নেই।
- কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে রাজ্য সরকার কে বাধ্য করা যায় না।
- রাজ্য সরকারি কর্মীদের প্রতি সরকার সহানুভূতিশীল তবে রাজ্যের বর্তমানে আর্থিক অবস্থা বকেয়া ডিএ দেওয়ার পক্ষে অনুকুলে নয়।
- বকেয়া ডিএ দিতে বিপুল সংখ্যক অর্থের প্রয়োজন, তা রাজ্যের কাছে নেই।
রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় জানান, প্রতিবারের মতো এবারও রাজ্য সরকারের আইনজীবী আগের মত একই কথা বলতে থাকেন যে, রাজ্যে প্রায় চার লক্ষ সরকারি কর্মচারী রয়েছে এবং তাদের মহার্ঘ ভাতা দিতে গেলে সরকারের প্রয়োজন ৪২ হাজার কোটি টাকা।
আরও পড়ুন, পোস্ট অফিসে স্বল্প সঞ্চয় স্কিম বিনিয়োগে মানতে হবে নয়া নিয়ম, না হলে বন্ধ হবে একাউন্ট।
গত ২০১৬ সাল থেকে চলছে এই মামলা। আর রাজ্য যে সহজে এই ডিএ দেবার জন্য প্রস্তুত নয়, তা আগেই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এমনকি কেন্দ্রের হারে ডিএ পেতে কেন্দ্রে চাকরি করার ও নিদান দেওয়া হয়েছে। আর সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে, অন্যদিকে রাজ্য সরকারী কর্মীরা ও হার মানতে রাজি নয়। মামলা মকাদ্দমা, আন্দোলন, অনশন কোনও কিছু করতে বাকি রাখছেন না তারা। আর এবার এটাই দেখার বকেয়া ডিএ কবে মেলে।