Primary TET 2014 – 32000 বাতিল শিক্ষক চরম সংকটে, পর্ষদ সভাপতির জরুরী তলব, ফের ইন্টারভিউ হবে?
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি তথা Primary TET 2014 মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় বহাল এখনও বিপদ কাটেনি ৩২০০০ চাকরিরত প্রাথমিক শিক্ষকদের। ঘুরিয়ে হলেও অবশেষে জাস্টিস গাঙ্গূলীর রায়ই বহাল থাকছে। শুধুমাত্র তারা পার্শ্ব শিক্ষক নয়, পূর্ণ বেতনই পাবেন। আইনের ঘুর প্যাচে, ‘পুনঃ মূষিক ভব’ এর মতো রায় কিন্তু পরিবর্তন হচ্ছে না।
Primary TET 2014 Case Update
কলকাতা হাই কোর্ট রাজ্যে ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল সংক্রান্ত মামলায় ডিভিশন বেঞ্চের রায় খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ডিভিশন বেঞ্চে শীর্ষ আদালতের বিচারপতি জেকে মাহেশ্বরী এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের জানিয়েছেন, এর আগে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্বন্ধে যে রায় দিয়েছিল সেই রায় খারিজ করা হলো। বর্তমানে আদালতের মতানুসারে আবারো বিশাল সংখ্যক প্রার্থীকে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করানোর প্রয়োজনীয়তা নেই। সর্বোচ্চ আদালত জানান, আগামিদিনে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এবিষয়টি নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ২০১৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নিয়েছিল ওই বছর টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ২৫ হাজার এরপর পর্ষদ ২০১৬ সালে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে। টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ৪২ হাজার ৯৪৯ জনকে প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে নির্বাচন করা হয়। এরপর একাধিক পরীক্ষার্থী ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ার ত্রুটি রয়েছে বলে হাইকোর্টের কাছে অভিযোগ করেন।
প্রাইমারী টেট নিয়ে অভিযোগ
অভিযোগ উঠে আসে যে ওই ৪২,৯৪৯ প্রাথমিক শিক্ষকের মধ্য ৩২,০০০ জন প্রার্থী অপ্রশিক্ষিত, এছাড়াও অভিযোগ করা হয় যে Primary TET 2014 নিয়োগ একাধিক অনিয়ম হয়েছে এবং ইন্টারভিউ ও অ্যাপটিটিউড টেস্ট না নিয়ে প্রার্থীদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। এরপর বিচারপতি অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায় পরীক্ষার্থী এবং পরীক্ষকের বয়ান সংগ্রহ করে মামলার সত্যতা প্রমাণ করে এরপর এর ধাক্কায় বাতিল হয়ে যায় রাজ্যের ৩২,০০০ শিক্ষকের চাকরি।
এরপর অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানান চাকরিচ্যুতরা আগামী চার মাস পার্শ্বশিক্ষকের (প্যারাটিচার) ন্যায় বেতন পাবেন। তিন মাসের মধ্যে পর্ষদকে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। সেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চাকরিচ্যুতরা অংশ নিতে পারবেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এই রায়ের ফলে ৩২,০০০ চাকরিচ্যুত শিক্ষক শুধু নন, Primary TET 2014 বা ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণদের জন্যও নিয়োগে অংশ নেওয়ার দরজা খুলে যায়। অর্থাৎ, ওই নির্দেশ মোতাবেক প্রায় ১ লক্ষের বেশি প্রার্থীকে নিয়ে পর্ষদকে আবার শুরু করতে হবে নিয়োগ প্রক্রিয়া।
আরও পড়ুন, রাজ্যের সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকাদের জন্য বিরাট ঘোষণা, বহু দিনের দাবী পূরণ।
এই অবস্থায় একক বেঞ্চের Primary TET 2014 মামলার রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যায় পর্ষদ এবং চাকরিচ্যুতদের একাংশ। গত ১৯ মে বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ একক বেঞ্চের চাকরি বাতিলের নির্দেশের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয়। ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, আপাতত ওই ৩২,০০০ শিক্ষকের চাকরি বাতিল হচ্ছে না। তবে তাঁদের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে। সেখানে সফল হলেই চাকরি থাকবে, নইলে নয়।
অর্থাৎ, ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের ফলে চাকরি বহাল থাকে ৩২,০০০ জনের। সুপ্রিম কোর্ট জানায়, এত দিন পরে এই বিশাল সংখ্যক প্রার্থীর নতুন করে ইন্টারভিউ নেওয়ার প্রক্রিয়া খুবই জটিল এবং কষ্টসাধ্য বিষয়। এছাড়াও এই নিয়োগ প্রক্রিয়া খরচসাপেক্ষ ফলে পর্ষদ তার ব্যয়ভার নিয়েও চিন্তিত। তাই আদালত মনে করছে, এই নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই।
সব দিক বিবেচনা করে খারিজ করা হল হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের অন্তর্বর্তী নির্দেশ। চাকরি বাতিলের রায় নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট একক বেঞ্চে সরাসরি কোনও নির্দেশ দেয়নি। অধিকাংশ আইনজীবীরা মনে করছেন, আসলে ঘুরপথে চাকরি বাতিলের নির্দেশ বহালই থাকল। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ৩২,০০০ শিক্ষক ডিভিশন বেঞ্চ থেকে কোনও সুরাহা না পেলে তাঁদের চাকরি বাতিল হয়ে যাবে। ওই শিক্ষকদের শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হতে হবে। তাহলে কি ফের ইন্টারভিউ হবে? প্রশ্ন উঠছে।
আরও পড়ুন, পশ্চিমবঙ্গের চাকরি প্রাথিদের চাকরি পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ।
পর্ষদ সভাপতিকে জরুরী তলবঃ
Primary TET 2014 সংক্রান্ত মামলায় আজ আবার পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল কে ডেকে পাঠালেন বিচারপতি অভিজিত গাঙ্গুলী। যদিও তিনি এই ব্যাপারে সাংবাদিক দের কিছুই জানান নি। তবে Primary TET 2014 নিয়ে ফের প্রশ্ন চিহ্ন উঠে এলো।