Air Conditioner – এসি কেনার আগে কি করণীয়, ঘরের সাইজ অনুসারে কত টন ও কত স্টার AC কেনা উচিত, কারেন্ট বিল কেমন আসবে?
এসি কেনার আগে জেনে নিনঃ
এবারে যে হারে গরম পড়েছে, তাতে সাম্প্রতিক সমস্ত রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। আর গরম পড়তেই হু হু করে বেড়েছে Air Conditioner বা এসি এর চাহিদা। বিভিন্ন দোকানে এসি কেনার লম্বা লাইন, আর বুক করলেও ডেলিভারি দিতে কয়েকদিন সময় লেগে যাচ্ছে। তবে এত দামী একটা জিনিস বছর বছর কেনা সম্ভব নয়। তাই Air Conditioner বা এসি কেনার আগে কয়েকটি বিষয় জেনে নিয়ে তারপর এসি কেনা উচিত বা এসি সম্পর্কে ধারনা।
Air Conditioner কেনার আগে জানা জরুরীঃ
প্রথমত এসি কেনার আগে থেকেই ঘরের কয়েকটি বিষয় ঠিক করতে হবে। তারপর কোন কোম্পানীর এসি কিনবেন, ভালো এসি চেনার উপায়, কোন এসি সবচেয়ে ভালো, কত স্টার নিলে ভালো হয়। ঘরের সাইজ অনুযায়ী কত টন এসি কেনা প্রয়োজন, ও এসি লাগালে কেমন কারেন্ট বিল আসে। এই সমস্ত কিছু তথ্য এই প্রতিবেদনে পেয়ে যাবেন।
ইলেক্ট্রিক লাইন ও ঘর প্রস্তুত করন
সাধারনত বসত বাড়ি বা ডোমেস্টিক ইলেক্ট্রিক লাইনে এসি এর লোড দেওয়া থাকে না। তাই সর্ব প্রথম ইলেক্ট্রিক অফিসে গিয়ে লোড এক্সটেনশন এর আবেদন করতে হবে। এরপর সপ্তাহ খানেক পর কোটেশন বেরলে, সেই টাকা জমা দিতে হবে। তারপর এসি কেনার ছাড়পত্র বা এসি লাগানোর অনুমতি পাওয়া যাবে। তবে অনেক ফ্লাট বাড়িতে এসি এর লোড দেওয়া থাকে। তাই আপনার ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রী এর কাছ থেকে এটা জেনে নিতে পারবেন। আপনার লোড বাড়াতে হবে কিনা।
এরপর প্রয়োজন যে ঘরে এসি বা Air Conditioner ইন্সটল করবেন সেই ঘরে আরথিং ঠিক আছে কিনা। সেটা না থাকলে আরথিং ঠিক করতে হবে। ইলেক্ট্রিসিয়ান আরথিং ও ইলেক্ট্রিক লাইন বা মোটা তার দিয়ে কানেকশন প্রস্তুত করে দেবেন। এছাড়া ঘরে ভেন্টিলেটর বা ঘুলঘুলি থাকলে সেটা বন্ধ করে দিতে হবে এবং জানালা ও দরজায় ফুটো বা ভাঙ্গা অর্থাৎ ফাঁকা রাখা যাবেনা। ঘরকে একপ্রকার এয়ার টাইট করতে হবে। নয়তো সেখান দিয়ে হাওয়া পাশ করলে এসি এর কারেন্ট বেশি খরচ হবে, তাছাড়া কম্প্রেসরে ও চাপ পড়বে।
ঘর অনুযায়ী কত টন এসি কিনবেন?
এই প্রশ্নটি প্রায় সকলের মনেই থাকে। সাধারনত একটি মিডিয়াম সাইজের ঘর ১২ বাই ১৩ থাকে। প্রথমে ঘরের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ গুন করুন। সেটা যদি ১০০ স্কয়ার ফুট এর কম হয় তবে এক টন এসি ই যথেষ্ট। তবে তার বেশি হলে ১.২ টন লাগানো উচিত। ১৫০ স্কয়ার ফুট বা বর্গক্ষেত্র বা তার কাছাকাছি হলে ১.৫ টন বা দেড় টন Air Conditioner লাগাতে হবে। ১২০ বর্গফুট পর্যন্ত ১ টন এসি চলে যাবে, যদি লোকসংখ্যা সর্বোচ্চ ৩ জন হয়।
আরও পড়ুন, সাধ্যের মধ্যে ইচ্ছাপুরন! অবিশ্বাস্য দামে লেটেস্ট 5G স্মার্টফোন এবার মধ্যবিত্তের
তবে মনে রাখবেন বর্তমানে এসি অটোমেটিক হয়। অর্থাৎ যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই বিদ্যুৎ লাগবে। তাই ১১০ বর্গফুটের বেশি হলে ১.৫ টন ই লাগানো উচিত। এতে মেসিনের উপর চাপ কম পড়বে। আর কারেন্ট বিল ও বেশি পার্থক্য হবে না। আর বর্তমানে ডমেস্টিক বা বসত বাড়িতে অধিকাংশ বাড়িতেই দেড় টন এসি লাগানো হয়। ১.২ টন এসি থাকলেও সেটার চাহিদা কম।
স্টার রেটিং – 3 Star or 5 Star
3 Star নাকি 5 Star Air Conditioner কিনবেন? এই প্রশ্ন ও অনেকেই জানতে চান। মনে রাখবেন 3 Star বা 5 Star er দামের ফারাক কয়েক হাজার টাকা। আর সেটা মাত্র একবার ই দিতে হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ বিল আপনাকে যত দিন Air Conditioner ব্যবহার করবেন ততদিন ই দিতে হবে। আর 3 Star এর চেয়ে 5 Star এর কারেন্ট বিল কম আসবে। তাই এককালীন টাকা খরচে সমস্যা না থাকলে 5 Star কেনাই বেশি ভালো। বাকিটা আপনার বাজেট ও আপনার চাহিদা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন।
বিদ্যুত খরচ কেমন?
বিভিন্ন বিদ্যুৎ সংস্থার বিদ্যুৎ বিল আলাদা হয়। তারপর ও একটা ধারনা দেওয়া যাক।
১ টন এসির ক্ষেত্রেঃ
3 Star Rating Air Conditioner: প্রতিদিন আট ঘন্টা চালালে ৭৫০ প্রতি ঘন্টায় ৭.৫ টাকা প্রতি ইউনিট হারে সারা মাসে প্রায় ১৩০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা বিদ্যুৎ খরচ পড়বে।
সেখানে 5 Star Rating Air Conditioner মাসে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা বিদ্যুৎ খরচ পড়বে।
১.৫ টন এসির ক্ষেত্রেঃ
3 Star Rating Air Conditioner : প্রতিদিন আট ঘন্টা চালালে ৯০০ ওয়াট প্রতি ঘন্টায় ৭.৫ টাকা প্রতি ইউনিট হারে সারা মাসে প্রায় ১৫০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা বিদ্যুৎ খরচ পড়বে।
সেখানে 5 Star Rating Air Conditioner ৮৪০ ওয়াট প্রতি ঘন্টায় মাসে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা বিদ্যুৎ খরচ পড়বে।
আরও পড়ুন, শুধুমাত্র মোবাইল দিয়ে ইউটিউব চ্যানেল করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করুন।
তবে এই খরচ কেবলমাত্র একটা ধারনা মাত্র। সঠিক রূপে ব্যবহার, কোম্পানী, ঘরের সাইজ, কোন তাপমাত্রায় রাখছেন, বাইরের তাপমাত্রা কত, আদ্রতা কেমন, এসি এক তলায় না দোতলায়, কি মোডে রাখছেন, নিয়মিত সার্ভিসিং করছেন কিনা, কম্প্রেসর এর গ্যাসের চাপ কেমন রয়েছে, কপার কন্ডেন্সর নাকি এল্যুমিনিয়াম এই সমস্ত কিছু নির্ভর করে বিদ্যুৎ এর খরচ হয়। তাই একেবারে সঠিক তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়। এমন কি একই এসিতে কোনও মাসে ১২০০ টাকা বিল আসতে পারে। পরের মাসে ১৪০০ টাকা ও আসতে পারে। মোট কথা বাড়তে এসি থাকলে প্রতিমাসে মোটামুটি আপনাকে ১২০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকার মতো বিল হবে, সেটা ধরে রাখতে হবে।
কোন কোম্পানীর এসি ভালো?
বর্তমানে টেকনোলজিতে প্রায় সকল কোম্পানী ই এগিয়ে রয়েছে। আর ইলেক্ট্রিক জিনিস ব্যবহারের উপর অনেকটা নির্ভর করে। কেউ যদি বাজারের সবচেয়ে দামী Air Conditioner কিনে একবার ও সার্ভিসিং না করান। তাহলে যেমন বেশিদিন টিকবে না। আবার অনেকে দরজা জানালা হালকা খুলে রেখে এসি চালালেও সেই কম্প্রেসর বেশি দিন ভালো থাকবে না। তবে বর্তমানে বাজারে যেসমস্ত কোম্পানীর এসি জনপ্রিয়, সেগুলো হলোঃ
প্যানাসনিক, ভোল্টাস, ব্লু স্টার, ক্যারিয়ার, ওয়ালপুল, ডাইকিন প্রভৃতি।
তবে এগুলো ছাড়া অন্য গুলো যে খারাপ তা কিন্তু নয়। আপনার এলাকায় কোন কোম্পানীর সার্ভিসিং ভালো সেটা দেখে এবং আপনার পছন্দ মতো ব্রান্ড নেওয়াই ভালো। এছাড়া আপনার পরিচিত দের মধ্যে যাদের বাড়িতে এসি আছে তাদের কাছ থেকে রিভিউ নিতে পারেন।
আশাকরি এই প্রতিবেদনে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন। এই বিষয়ে আপনার মতামত বা প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এই প্রতিবেদনটি সকলকে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো।
আরও পড়ুন, কয়েক কোটি প্যান কার্ড গ্রাহকদের জন্য জরুরি নির্দেশ দেওয়া হল সরকারের তরফে।