সরকারি কর্মীদের বেতনবৃদ্ধি সহ এক গুচ্ছ সুবিধা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী, মমতা ব্যানার্জি।
সরকারি কর্মীদের জন্য বিরাট ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর, কত বেতন বাড়ছে, কি কি সুবিধা পাবেন, পুরোটা দেখে নিন।
বকেয়া ডিএ আন্দোলনের মধ্যেই রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য একগুচ্ছ ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সভাঘরে সরকারি কর্মচারীদের কয়েকটি সংগঠন এবং অফিসারদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক করেন। সেই বৈঠকের পরেই মুখ্যমন্ত্রী সরকারি কর্মীদের জন্য একগুচ্ছ সুযোগ সুবিধার (Chief Minister Mamata Banerjee Announced Benefits for Government Employees) কথা ঘোষণা করেন।
কি কি ঘোষণা হলো?
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা অনুযায়ী রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতি এবং বিভিন্ন বছরে বর্ধিত বেতনের সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়, পাশাপাশি, Health Scheme-এর আওতায় সরকারি কর্মীদের ক্যাশলেস চিকিৎসার সুযোগ বাড়ানো, এছাড়া প্রশাসনের বেশ কয়েকটি স্তরে বাড়তি পদ সৃষ্টির মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে সরকারি কর্মীরা বিরাট সুযোগ সুবিধা পেতে চলেছেন, সন্দেহ নেই।
সরকারি কর্মীদের প্রতিক্রিয়া
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষনার পরেই DA নিয়ে আন্দোলনকারী সরকারী কর্মীদের একাংশ ক্ষুব্ধ। মুখ্যমন্ত্রী বকেয়া ডিএ নিয়ে কোনো কথা না বলায় বা এদিনের বৈঠক থেকে ডিএ মেটানোর কোনো আশ্বাস না দেওয়ায় আন্দোলনকারী সংগঠনের তরফে একাধিক প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
DA-র দাবিতে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশের সংগঠনের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, বেশ কয়েকটি সংগঠনকে বৈঠকে ডেকে কর্মী আন্দোলনে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। তার সঙ্গে সরকার DA মেটানোর ব্যাপারে নীরব থেকেছে।
কনফেডারেশন অফ স্টেট গভমেন্ট এমপ্লয়িজ এর তরফে বলা হয়েছে, বকেয়া ৩৬ শতাংশ ডি এ ১২ মাস দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের ২৭ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা খরচ হতো। ২০২১- ২২ আর্থিক বছর পর্যন্ত বেতন এবং ভাতা খাতে ব্যয় না হওয়া টাকার পরিমান ২৫ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। সেখানে সরকারকে আরো ২৬০০ কোটি টাকার মতো দিতে হতো। সেই বিষয়ে সরকার কিছুই বলেনি। কর্মচারী পরিষদের তরফে জানানো হয়েছে, এসএসকে, এমএসকে শিক্ষকদের ছিটেফোঁটা সুযোগ দেওয়া ছাড়া বাকি সব তেলা মাথায় তেল ঢালার মতো ঘোষণা করা হয়েছে।
ডিএ আন্দোলনকারী সংগঠনের তরফে যাই বলা হোক না কেন রাজ্য সরকারের অধিকাংশ কর্মচারীরাই মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় যথেষ্ট খুশি। তারা যে আগামীতে আরও বেশ কিছু সুবিধা পেতে চলেছেন, সেটা স্পষ্ট। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী রাজ্য সরকারের তরফে যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া হয়েছে, সেগুলো এক নজরে দেখে নেওয়া যাক:
যেকোনো সরকারি কর্মীর চাকরি জীবনের শুরু থেকে ৮, ১৬ এবং ২৫ বছরের মাথায় বর্ধিত পে স্কেল (Pay Scale) অনুযায়ী বেতন পাওয়া যেত। সেখানে দুটি ধাপ থেকে এক বছর কমিয়ে ১৫ বছর এবং ২৪ বছর করা হয়েছে। ওই সরকারি কর্মচারীরা আরও ২ বছর বাড়তি হারে বেতন পাবেন।
SSK বা শিশুশিক্ষা কেন্দ্র এবং MSK বা মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষকদের প্রতিবছর ৩ শতাংশ হারে ভাতা বৃদ্ধি করা হবে। অবসরের সময়ে এককালীন ৩ লক্ষ টাকার সুবিধা দেওয়া হবে।
মাদ্রাসা শিক্ষা ও সংখ্যালঘু বিষয়ক দপ্তরের (Madrasha Education and Minority Department) আওতায় সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষক ১ জুন থেকে এই সুবিধা পেতে চলেছেন।
সরকারি কর্মীরা হেলথ স্কিম এর আওতায় এবার থেকে দেড় লক্ষ টাকার পরিবর্তে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্যাশলেস চিকিৎসার (Cashless Treatment Facility) সুবিধা পাবেন।
এছাড়াও নবান্ন সভাঘরের এই বৈঠকে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আরো পদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দপ্তরে পদোন্নতি হওয়ার ফলে যে সমস্ত শূন্য পদগুলি রয়েছে, তা ৩ মাসের মধ্যেই পূরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কমন ক্যাডার সার্ভিসে (Common Cadre Service) অতিরিক্ত সচিবের (Additional Secretary) ১০টি বাড়তি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।
সমবায়, Revenue Service,, শ্রম, তথ্য ও সংস্কৃতি, খাদ্য ও সরবরাহ, অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস, Legal and Statistics বিভাগের যুগ্ম এবং বিশেষ সচিব পদের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
সেচ, পূর্ত ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার বিভিন্ন স্তরেও পদের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
পদ বৃদ্ধি ও পদোন্নতিঃ
যে সমস্ত ক্ষেত্রে পদ বৃদ্ধি হয়েছে সেগুলি হল:
সেকশন অফিসারের ৪৭০ টি পদ, বেড়ে হয়েছে ৬০০
OSD বা Officer on Special Duty-র মতো পদ ২০৮টি, বেড়ে হয়েছে ৩০০
সহকারী সচিবের ১১২ টি পদ, বেড়ে হয়েছে ১৫০
উপসচিবের ১১৪ টি পদ, বেড়ে হয়েছে ১৫০
যুগ্ম সচিবের (Joint Secretary) ২০টি পদ, বেড়ে হয়েছে ৩০ টি।
আরও পড়ুন, প্রাইমারি টেট মামলায় ৩২০০০ চাকরি বাতিল নিয়ে নিয়ে নতুন ঝামেলা।
সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার পরে কয়েক মাসের মধ্যেই দেশজুড়ে সাধারণ নির্বাচন (General Election) তার আগে রাজ্য সরকারের তরফে ইতিমধ্যেই সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে শূন্য পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে যে সমস্ত শূন্য পদ রয়েছে, যত শীঘ্র সম্ভব সেই পদগুলিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া (Recruitment Process) সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর এবার সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিভিন্ন স্তরে একগুচ্ছ সুবিধা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।