ডিএ মামলা কি সুপ্রিম কোর্টে ঝুলবে নাকি দ্রুত নিষ্পত্তি! তহবিল গঠনে 42 হাজার কোটি? বিস্তারিত দেখুন।

রাজ্যের টাকা নেই – একথা বারংবার ফুটে উঠেছে রাজ্য সরকারের হলফনামায়। আর ডিএ সরকারি কর্মীদের সাংবিধানিক অধিকার, এ দাবিও কলকাতা হাইকোর্ট এবং SAT এ প্রমাণিত হয়েছে বারংবার। তাহলে কোন বিষয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট গুরুত্ব দিতে পারেন, তা দেখে নেওয়া যাক।

ডিএ সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি চায় উভয় পক্ষই।

রাজ্য সরকারী কর্মীদের এই ডিএ সংক্রান্ত বিষয়ে নিজেদের বক্তব্য সরকারের কাছে তুলে ধরার বিষয়টি আজ নতুন নয়। তারা দীর্ঘ প্রায় 6 বছর ধরে নিরন্তর লড়াই করে যাচ্ছেন। তাদের এই দাবি যে ন্যায্য, তা বারংবার প্রমাণীত হয়েছে মহামান্য হাইকোর্টের রায়ে। তাহলে সরকার কেন মানতে চায় না?

পূর্বে রাজ্য সরকার এই DA সংক্রান্ত বিষয় যে সরকারি কর্মীদের অধিকার, তা মানতেই চাইতো না। তবে এতো বছর পরে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ফলে, সরকার এটা মেনে নিয়েছে যে ডিএ সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য। তবে এবারে সরকারের দাবি, রাজ্যের কাছে টাকা নেই। টাকা থাকলে সরকার অবশ্যই কর্মীদের ডিএ দিয়ে দিত।

রাজ্যের শাসক দলের বিভিন্ন নেতা মন্ত্রীদের মুখে একথা বারবার ফুটে উঠেছে। তাহলে রাজ্য সরকার কেন মহামান্য সুপ্রিম করতে SLP এর জন্য আবেদন করেছে? কি এই SLP? রাজ্য সরকার আগে তো রিভিউ পিটিশন করত। তবে এবারে এই নতুন আবেদন কেন? আসুন বিষয়টি আরও পরিষ্কার করে জেনে নেওয়া যাক।

স্পেশাল লিভ পিটিশন (SLP) কি?
এর পুরো নাম হচ্ছে স্পেশাল লিভ পিটিশন। এর অধীনে, সংক্ষুব্ধ পক্ষকে ভারতের ভূখণ্ডের কোনও আদালত বা ট্রাইব্যুনালের আদেশ বা রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের জন্য সুপ্রিম কোর্টে শুনানির জন্য একটি বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয়, যখন আইনের কোনও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত থাকে বা গুরুতর অবিচার করা হয়।

অর্থাৎ রাজ্য সরকারকে মহামান্য কোলকাতা হাইকোর্ট বকেয়া ডিএ মেটানোর যে রায় দিয়েছে, সেটা অন্যায্য। এদিকে আবার রাজ্য সরকারই বলছে যে তাদের কাছে টাকা নেই। তাহলে, টাকা না থাকার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। আবার রায় ন্যায্য নাকি অন্যায্য, সেই বিষয়টিও আলাদা। সুতরাং রাজ্য সরকারের কাছে পরিষ্কার কোন বার্তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

কোন ধারায় করা যায় এই SLP এর আবেদন?আইনের কোনও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত থাকলে বা প্রশ্নটি জনগুরুত্বের সাথে জড়িত থাকলে বা গুরুতর অবিচার করা হলে যে কোনও সংক্ষুব্ধ পক্ষ 136 ধারার অধীনে একটি বিশেষ ছুটির আবেদন (SLP) দায়ের করে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে।

সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টির শুনানি করতে পারে এবং উপযুক্ত মনে করলে আবেদন মঞ্জুর করতে পারে এবং সেই আবেদনটিকে ‘আপিল’-এ রূপান্তর করতে পারেন। SLP তারপর একটি আপীল হবে এবং আদালত বিষয়টি শুনবে এবং একটি রায় দেবে৷ ভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ 133-136 সুপ্রিম কোর্টের আপিলের এখতিয়ারকে সংজ্ঞায়িত করে।

SLP না মানলে কি হবে? রিভিউ বা আপিলের মত বিকল্প প্রতিকার নষ্ট হয় না যদি আবেদন মঞ্জুর না করে SLP থ্রেশহোল্ডে বরখাস্ত করা হয়। উত্তরদাতা/পিটিশনারের পরবর্তী SLP-তে আবেদন মঞ্জুর করা যেতে পারে যেখানে পূর্বে আবেদনকারী/প্রতিবাদীর SLP থ্রেশহোল্ডে খারিজ করা হয়েছিল।

রিভিউ এর সাথে SLP এর কি পার্থক্য?
আপনি লক্ষ্য করতে পারেন যে SLP হল ভারতের নিম্ন আদালত বা ট্রাইব্যুনালে গৃহীত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি চাওয়ার একটি পিটিশন। এসএলপি আপিল নয় বরং আপিলের জন্য দায়ের করা পিটিশন। সুপ্রিম কোর্ট এটি গ্রহণ বা খারিজ করতে পারে।

সরকারের দাবি, তারা কর্মীদের 125% ডিএ ইতিমধ্যেই দিয়ে দিয়েছে। ডিএ কাল্পনিক। একথা ঘুরে বেরাচ্ছে চারিদিকে। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, তারা কর্মীদের নোশনাল এফেক্ট হিসেবে দিয়ে দিয়েছে। তবে পয়লা জানুয়ারি 2016 তারিখ থেকে 125% ডিএ না দিয়েও সরকারের দাবি এমন যে তারা এই টাকা দিয়ে দিয়েছে। কারণ পয়লা জানুয়ারি 2019 থেকে নোশনাল এফেক্ট সহ বেতন চালু হয়েছে।

বছরে 2 কিস্তি ডিএ নিয়ে কি বক্তব্য?
সরকারি আইনজীবীর অপর দাবি ছিল বছরে 2 কিস্তি ডিএ দেবার প্রসঙ্গ। এক্ষেত্রে সরকারের দাবি এই 2 কিস্তি ডিএ দিতে গেলে সরকারের 41 হাজার 770 কোটি টাকার প্রয়োজন। এই হিসেবে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে আইনজীবী মহামান্য আদালতের কাছে একটি সাদা চিরকুট আকারে পেশ করে। সেক্ষেত্রে মামলাকারী সরকারি কর্মী সংগঠনের এক নেতৃত্ব মলয় মুখোপাধ্যায় জানান, সেই কাগজে কোন সরকারি সিলও ছিল না।

তবে এক্ষেত্রে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে সরকারের কত টাকা খরচ হবে। এক্ষেত্রে রাজ্যের সকল কর্মচারীদের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে যার কপি সকলকে দেওয়া হয়েছে। আদালতে এই মৌলিক অধিকারের কোথাও তোলা হয়েছে। 2018 সালে হাইকোর্টে এটা পরিষ্কার রায় হয়ে গিয়েছিল যে, রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ একটি সাংবিধানিক অধিকার। তাহলে এতদিন কেন রাজ্য সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করেন নি? একথা জানান মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট।

সব রাজ্য ডিএ পায়, পশ্চিমবঙ্গে কেন নয়? কি হল সুপ্রিম কোর্টের ফাইনাল ডিসিশন। বিস্তারিত দেখুন।

SLP বেঞ্চে শুধুমাত্র এটাই বিচার হয় যে, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন গৃহীত হবে কি হবে না। সুতরাং এক্ষেত্রে এই মামলা দীর্ঘদিন ধরে যে চলবে না, তা পরিষ্কার। এক্ষেত্রে আরও জানা গেছে, সরকারি কর্মীদের ডিএ এর মতোই এমন একটি বিষয় এসেছিল সুপ্রিম কোর্টে। সেটি ছিল বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মীদের জন্য। সেক্ষেত্রেও তা খারিজ হয়েছিল।

এবারে আগামী 14ই ডিসেম্বর এই মামলার শুনানি হবে। মামলা যেহেতু সুপ্রিম কোর্টে এখনো গৃহীত হয় নি সেহেতু কোলকাতা হাইকোর্টের রায়ে কোন স্টে অর্ডার সেওয়া হয় নি। তাই কোলকাতা হাইকোর্টে মামলা চলবে। তবে সেটিকে সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে যদি SLP এর আবেদন খারিজ হয়ে যায়, তাহলে মহামান্য কোলকাতা হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে।

ডিএ নিয়ে সুপ্রিম নির্দেশ, রাজ্যকে 14 তারিখ পর্যন্ত সময় – সুপ্রীম কোর্ট।

এই মামলা যেহেতু রোপা 309 ধারায় করা হয়েছে, সেহেতু যারা যারা সরকারের থেকে এতদিন পঞ্চম বেতন কমিশনের আওতায় বেতন, ভাতা পেয়ে এসেছেন, প্রত্যেকেই এই বকেয়া পাবার দাবীদার। একথা রাজ্য সরকারের দেওয়া চিরকুটের ক্ষেত্রেও পরিষ্কার। এদাবি করেছেন খোদ মলয় মুখোপাধ্যায় মহাশয়। সুতরাং, সকলের চোখ এখন 14ই ডিসেম্বর, 2022 তারিখের দিকেই। আপনাদের কি মতামত? জানান কমেন্ট বক্সে। ধন্যবাদ।
Written by Mukta Barai.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button