সব রাজ্য ডিএ পায়, পশ্চিমবঙ্গে কেন নয়? কি হল সুপ্রিম কোর্টের ফাইনাল ডিসিশন। বিস্তারিত দেখুন।
এবারে হয় এস্পার, নয় ওস্পার। পশ্চিমবঙ্গে প্রবল শীতেও ডিএ প্রসঙ্গে পারদ এক্কেবারে তুঙ্গে। আজ সেই প্রতীক্ষিত 5ই ডিসেম্বর। বড়দিনের আগেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী তথা WB Govt. Employees – দের জন্য কি সুদূর দিল্লী থেকে আসছে সুসংবাদ? নাকি সারা ভারতের সমস্ত রাজ্যগুলি যখন কেন্দ্রের AICPI হিসেবে ডিএ দিচ্ছে, তখন পশ্চিমবঙ্গের জন্য কি অন্য নীতি? কি হতে পারে সুপ্রিম কোর্টে? সাময়িক পরিস্থিতি বিচারে বিস্তারিত আলোচনায় জেনে নেওয়া যাক।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থেকে সরকারি কর্মীদের ডিএ না দিয়ে আছে কি অন্য উপায়!
আজই পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সিদ্ধান্ত দিয়ে দিতে পারে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট তথা WB DA Judgement in Supreme Court. কারণ এর আগেও এই ডিএ প্রসঙ্গে প্রবল ভর্তসনার মুখে পরতে হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। প্রসঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তরের বকেয়া ডিএ। সমস্ত বকেয়া মেটাতে কোর্টের নির্দেশে সরকার বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মীদের 10% সুদ সহ সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে দিতে চলেছে।
এবারে দেখা যাক, এই বকেয়া DA প্রসঙ্গে রাজ্যের অবস্থান। সারা পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত সরকারি কর্মীদের আশা ভরসার জায়গা এখন মহামান্য সুপ্রিমকোর্ট, Supreme Court তথা SC. লড়াই করতে ময়দানে নেমেছে রাজ্যের 3 টি কর্মী সংগঠন। তাদের ন্যায্য দাবীর জন্য কোলকাতা হাইকোর্টের রায় বহাল থাকতে চলেছে, এমনটাই আশা করছেন তারা।
রাজ্য সরকারকে মহামান্য কোলকাতা হাইকোর্ট DA মিটিয়ে দেবার জন্য অনেক আগেই অর্ডার দিয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার তা না দিয়ে পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছিল কোলকাতা হাইকোর্টেই। কিন্তু সে দাবি কোলকাতা হাইকোর্ট খারিজ করে দিয়ে পূর্বের অর্ডারকেই বলবৎ রেখেছে। সেই অর্ডারকে চ্যালেঞ্জ করেই রাজ্য নিজের দাবি জানিয়েছে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে।
তবে রাজ্য সরকারের এই SLP তথা Special Leave Petition মামলা এখন গ্রহণ করে নি মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট। এই সংক্রান্ত বিষয় আজই উঠতে চলেছে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে। আর আজ যদি মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট পূর্বের দেওয়া কোলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল এবং ডিভিশন বেঞ্চের রায়কেই বহাল রাখে, তাহলে রাজ্য সরকারের কাছে কর্মীদের বকেয়া না মিটিয়ে আর কোন উপায় থাকবে না।
এই মামলায় রাজ্য সরকারি কর্মীদের পাল্লা বেশ ভারী। তার কারণ হিসেবে প্রথমেই যেটা বলা যায়, তা হল রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মীদের বকেয়া ডিএ মেটানোর প্রসঙ্গ। আর তার সাথে রয়েছে কোলকাতা হাইকোর্টের অর্ডার। কারণ এই ডিএ এখন রাজ্য সরকারি কর্মীদের একটি মৌলিক অধিকারে পরিণত হয়েছে।
এই মামলা সম্পর্কে প্রত্যেকের দাবি বিস্তারিত শুনেই সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্য সরকার চাইবে, এই মামলা যাতে গৃহীত হয়। কিন্তু তার আগে যখনই মাননীয় বিচারপতিদ্বয় যখন এই মামলার বিস্তারিত শুনবেন, তখনই সম্পূর্ণ বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে তাদের কাছে।
সারা দেশের প্রত্যেকটি রাজ্যই যখন কেন্দ্রের দেওয়া ডিএ কে অনুসরণ করে চলছে এবং নিজেদের সাধ্যমত DA দিতে মরিয়া, সেখানে এরাজ্য তথা পশ্চিমবঙ্গে কেন সেই নীতি মেনে দেওয়া হবে না মহার্ঘভাতা। এছাড়া কোলকাতা হাইকোর্ট এবং SAT তথা State Administrative Tribunal এর রায়ে একথা পরিষ্কার যে, রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ সাংবিধানিক অধিকার।
সারা দেশে যেমন দ্রব্য মূল্যের বৃদ্ধি ঘটে তেমন ঘটে রাজ্যেও। সে কারণে কেন্দ্রের ডিএ AICPI মেনে দেওয়া হয় বলে রাজ্যগুলিকেও সেই একই নিয়মে বকেয়া মেটানো উচিৎ। তবে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের রায় কে সারা দেশের প্রত্যেক নাগরিককে মানতেই হয়। এক্ষেত্রে এই মহার্ঘভাতা সম্পর্কিত রায় যদি রাজ্য সরকারের পক্ষে যায়, তাহলে দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলিতেও পড়তে পারে তার প্রবল প্রভাব।
আর যদি রায়, সরকারি কর্মীদের পক্ষে যায়, তাহলে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মী তো নয়ই, বরং সেই জয় হবে গোটা দেশের প্রত্যেক সরকারি কর্মীদের তা তিনি কেন্দ্রের কর্মী হন বা হন কোন রাজ্যের। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে করা এই মামলায় জয় নিয়ে দৃঢ় বিশ্বাসী রাজ্যের সরকারি কর্মচারী পরিষদ, কনফেডারেশন অফ স্টেট গভঃ এমপ্লয়িজ এবং ইউনিটি ফোরাম।
এছাড়াও এই মামলায় পার্টি হতে চায় রাজ্যের শিক্ষকদের বেশ কয়েকটি সংগঠন। কারণ, রাজ্য সরকারের বয়ানে সরকার তার কর্মীদের যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, সেক্ষেত্রে দেখা গেছে, রাজ্যের শিক্ষকদের সংখ্যার কোন উল্লেখ নেই। যদিও এই বিষয় যে সম্পূর্ণ যুক্তিহীন, সে দাবি করেছে রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের নেতৃত্ব।
জানুয়ারিতেই বকেয়া DA সহ, বেতন বাড়ছে সরকারী কর্মীদের, ধোয়াশা নয়, সরকারি বিবৃতি পাওয়া গেল।
এছাড়া এই বকেয়া বিষয়ে রাজ্যে তৈরি হয়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। তারা এই বকেয়া মহার্ঘভাতা নিয়ে আইনি আন্দোলনের সাথে সাথে রাস্তার আন্দোলনকে আরও বেশি সক্রিয় করে তুলতএ জোড় কদমে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এই নিয়ে তাদের দাবি না মিটলে বিস্তর কর্মসূচীও রয়েছে। অবলম্বেই তারা গণছুটির পথে নামতে চলেছেন।
কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্মেন্ট এমপ্লয়িজের নেতৃত্ব মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন যে, “রাজ্য সরকার এখনো ডিএ কার্যকর করেনি। তবে এবার তাদের করতেই হবে। আমাদের আশা মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের আবেদন ডিসমিস করে দেবে। আগেও বলেছি, এই সরকারকে ডিএ দিতেই হবে। সময়ের অপেক্ষা মাত্র। সোমবারের রায় থেকে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে আমরা আশাবাদী”।
জানুয়ারিতে DA পাবেন পশ্চিমবঙ্গের কর্মীরাও, তারিখ উল্লেখ করে অর্ডার বেরলো।
আগামী 7ই ডিসেম্বর তারিখে কোলকাতা হাইকোর্টে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে করা আদালতের রায় অবমাননার মামলার শুনানি আছে। এর আগের শুনানিতে বিচারপতিদ্বয় রাজ্য সরকারকে জানিয়েছিল কঠোর বার্তা। খুব শীঘ্রই যাতে রাজ্যের সরকারি কর্মীদের মহার্ঘভাতা মেটানো হয়, সে বিষয়ে মামলা অনন্ত কাল ধরে চলবে না। আর আজকের শুনানিতে কি হয়, সেটাই এখন দেখার।
এই সংক্রান্ত আপডেট পেতে অবশ্যই ফলো করতে থাকুন ওয়েবসাইট। আমাদের নজর থাকবে, আজ কি রায় হতে চলেছে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে। সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ কোন পথে মেতাবে রাজ্য? নাকি আর দিতেই হবে না বকেয়া। আপনার মতামত জানাতে পারেন কমেন্ট বক্সে। ধন্যবাদ।
Written by Mukta Barai.