পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের বকেয়া DA মেটাতে তহবিল গঠন নবান্নের, PF নয়, নগদেই মেটানো হবে।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারী কর্মীদের বকেয়া DA সংক্রান্ত বিষয়ে তাল বাহানা চলছে বহুবছর ধরেই। কখনও হাইকোর্ট আবার কখনও স্যাট। আবার সুপ্রিম কোর্টে এই বিষয় যাওয়াতে বেশ অসন্তুষ্ট রাজ্য সরকারি কর্মীরা। তবে আদালতের রায় মেনে ডিএ মামলার অর্ডার বিষয়ে সরকারের এই বাস্তব রূপদানকে স্বাগত জানালেন সরকারি কর্মীরা। আসুন, বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বকেয়া DA মামলায় সরকারি কর্মীদের তথা WB Govt Employees – দের বকেয়া মেটাতে হবে 100 শতাংশ।
পূর্বেই কোলকাতা হাইকোর্ট দুটি রাষ্ট্র-চালিত বিদ্যুৎ সংস্থা, WBSETCL এবং WBSEDCL – কে গত 23 শে জুনের মধ্যে কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা কমপক্ষে 20% প্রদান করার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। বিচারপতি রাজশেখর মান্থার আদেশে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য-চালিত বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির সিএমডি এবং দুই মহাব্যবস্থাপকের বেতন ও ভাতা মেটানোর জন্য 20% বকেয়া মিটিয়েছেন শর্তসাপেক্ষে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইলেকট্রিসিটি বোর্ড ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, সংস্থার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করার জন্য অবমাননার আবেদন করেছিল আদালতে। ডব্লিউবিএসইটিসিএল-এর এমডি সান্তনু বসু এবং পরিচালক শ্যামা রায় চৌধুরী পূর্বেই অভিযুক্ত কর্মকর্তা হিসাবে আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং এই বিষয়ে তাদের বক্তব্য রেখেছেন।
হাইকোর্টে সংস্থা জানায় যে, তারা বকেয়া DA সব মিলিয়ে মোট 36 কিস্তিতে মিটিয়ে দেবেন। কিন্তু সংস্থার ঐ প্রার্থনা আদালত প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছিল। এর পরিবর্তে আদালত দুই কোম্পানিকে পরিষ্কার জানিয়ে দেয় যে, 5 থেকে 8 টি কিস্তিতে বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছিল।
বিচারপতি রাজশেখর মান্থা একযোগে বকেয়া পরিশোধ করতে তাদের “অক্ষমতা” পরীক্ষা করার জন্য কোম্পানিগুলির বর্তমান এবং সম্পূর্ণ আর্থিক রেকর্ড চেয়েছিলেন। 24 শে জুন শুনানির আগে এগুলো জমা বলা হয়েছিল।
তবে এরপর ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইলেক্ট্রিসিটি ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড তথা WBSETCL এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইলেক্ট্রিসিটি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড তথা WBSEDCL হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে আগেই গিয়েছিল। রাজ্য সরকারের এই আর্জি কার্যত খারিজ করে দিয়েছিল উচ্চ আদালত।
সৌমেন সেন এবং সৌগত ভট্টাচার্য – এই বিচারপতিদ্বয়ের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল, কেন্দ্রীয় হারেই ঐ বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্মীদের 100% বকেয়া DA মিটিয়ে দিতে হবে। পঞ্চম বেতন কমিশন অনুসারে বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মীরা কেন্দ্রীয় হারেই বকেয়া DA পেয়েছেন। তবে সমস্যা শুরু হয় 2016 সালের পর থেকেই।
এর ফলেই হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয় যার রায় কর্মীদের পক্ষেই যায়। এমনকি ডিভিশন বেঞ্চও কর্মীদের পক্ষে বকেয়া DA মামলার রায় দেন। কার্যত সিঙ্গেল এবং ডিভিশন বেঞ্চ, উভয় ক্ষেত্রেই তাদের এই অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অবশেষে কোর্টের রায়কে মেনে নিয়ে বর্তমানে 500 কোটি (500 Crore) টাকার বরাদ্দ করা হয়েছে।
এই তহবিল থেকে 2016 সাল থেকে 2019 সাল পর্যন্ত কর্মীদের বকেয়া মেটানো হবে। তাহলে এরপর থেকে কিভাবে দেওয়া হবে? এক্ষেত্রে 2020 সাল থেকে বকেয়া মেটানোর বিষয়ে আবার পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আদালত সেই আর্জি গ্রহণ করেছে। তবে আদালতের বক্তব্য, কর্মীদের সম্পূর্ণ বকেয়া মেতাতেই হবে।
সরকারি ছুটি বাতিল, বিশেষ পরিস্থিতিতে সমস্ত রাজ্য সরকারী অফিস ও স্কুল কলেজে। কি কারনে জেনে নিন।
আদালতের রায় যদি কর্মীদের বিপক্ষে যায় তাহলে এই DA কর্মীদের ফিরিয়ে দিতে হবে সরকারকে। তবে তা সম্পূর্ণ বিচারের রায়ের ওপরে নির্ভরশীল। এতো গেল রাজ্য বিদ্যুৎ বিভাগের কথা। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সরকারি কর্মীদের বকেয়া নিয়েও চলছে অনেক কিছু।
তারাও নিজেদের বকেয়া DA মামলার জয় পেয়েছেন। তবে বর্তমানে সরকার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে রিভিউ করার জন্য। যদিও সেই আবেদন ভুলে ভরা। তাই আপাতত ডিফেক্ট লিস্টেই পড়ে আছে বকেয়া DA মেটানোর রিভিউ আবেদন।
এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মীদের একটি মামলাকারী সংগঠন, কনফেডারেশন অফ স্টেট গভঃ এমপ্লয়িজ এর সাধারণ সম্পাদক মলয় বাবু জানান যে, মহামান্য হাইকোর্ট ইতিমধ্যেই বকেয়া DA মিটিয়ে দেবার নির্দেশ দিয়েছে। বিদ্যুৎ দপ্তর তহবিল করার কথা বললেও আদতে এই তহবিল গঠন করেছে রাজ্য সরকার স্বয়ং। মলয় বাবু জানান, তারাও এই বিষয়ে বেশ আশাবাদী।
আবার জমা দিতে হবে লাইফ সার্টিফিকেট, কাদের বাতিল হবে, এই 6 উপায় জেনে রাখুন।
তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সরকারি কর্মীরাও (WB Govt. Employees) বকেয়া DA পাবেন খুব তাড়াতাড়ি। এই বিষয়ে তারা দৃঢ় বিশ্বাসী। তবে সরকার এই টাকা তহবিল গঠন করে দেবে, নাকি নেবে অন্য কোন পন্থা। সেটি অবশ্য রাজ্য সরকারের নিজস্ব বিবেচনার বিষয়। রাজ্যের প্রায় সমস্ত সরকারি কর্মীদের যৌথ সংগঠন তৈরি হয়েছে। তারা আগামীতে এই বকেয়া DA আদায়ের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী কর্মবিরতির পথেই হাঁটবেন বলে জানা যাচ্ছে।
সকলকেই একজোট হয়ে আন্দোলনে সামিল হবার আর্জি তাদের। তবে সরকারের আবেদন সুপ্রিমকোর্টে যাওয়া পর্যন্ত মামলা শুনবে কোলকাতা হাইকোর্ট। এমন আরও আপডেট নিউজ পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে নজর রাখুন। এছাড়াও চাকরি, স্কলারশিপ, ইনভেস্টমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি নানা প্রকল্প সম্পর্কে জানতে দেখতে থাকুন। নিজের মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। ধন্যবাদ।
Written by Mukta Barai.